Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভৌগলিক পরিচিতি

মহাদেবপুর উপজেলা বহুমুখী বৈশিষ্ট্য আর বৈচিত্র্যে ভরপুর একটি উন্নত জনপদ । ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা সৃষ্টি হওয়ার পর ১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে মহাদেবপুর কে নওগাঁ মহকুমার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর পূর্ব পর্যমত মহাদেবপুর দিনাজপুর জেলার অমর্তগত ছিল। ১৫ই ডিসেম্বর ১৯৮২খ্রিষ্টাব্দে মহাদেবপুরকে মানোন্নীত থানায় উন্নীত করা হয় এবং ১৯৮৪ খৃষ্টাব্দে নওগাঁ মহকুমা জেলায় রতপামতরিত  হলে “মহাদেবপুর''  নওগাঁ জেলার অন্যতম উপজেলায় রতপামতরিত হয়।Mr. L.S. S.O Mallery, ICS, ১৯১৬খ্রিষ্টাব্দে তাঁর লিখিত Bengal District Gazeteer গ্রমেহর ১১৬ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন যে, Mohadevpur, A Village in the Naogaon subdivision Situated by the side of the Atri river, 16 Miles north-west of Naogaon. কালের প্রবাহে ম্যালেরীর সেই গ্রাম রতপামতরিত হয়েছে থানা সার্কেলে পরবর্তীতে মানোন্নীত থানা  ও বর্তমানে উপজেলায় উন্নীত । আজ একবিংশ শতাব্দীতেত এসে মহাদেবপুর একটি শহরের অবয়ব লাভ করেছে । ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সাহিত্য আর জীবনযাত্রায় মহাদেবপুর নওগাঁ জেলার অগ্রসরমান একটি উপজেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। সামান্য একটি গ্রাম থেকে যার উৎপত্তি তা আজ এক উন্নত জনপদ । মূলতঃ পশ্চিম বঙ্গের বীরভূম, বর্ধমান ও রাঢ় অঞ্চল হতে আগত ব্যত্তিুবর্গের সমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাদেবপুর আজ এক জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে ।

 

মহাদেবপুর উপজেলা ২৪.৪৮র্ ও ২৫.০১র্ উত্তর অক্ষ্যাংশের মধ্যে এবং ৮৮.৩৮র্ ও ৮৮.৫৩র্ পূর্ব দ্রাঘিমাংশের মধ্যে অবসিহত। নওগাঁ জেলা সদর হতে  ২৪ কিঃমিঃ দূরে নওগাঁ জেলার কেন্দ্রসহলে মহাদেবপুর উপজেলা । মহাদেবপুর, এনায়েতপুর, রাইগাঁ, হাতুড়, চাঁন্দাশ, খাজুর, উত্তরগ্রাম, ভীমপুর, চেরাগপুর ও সফাপুর এই ১০টি ইউনিয়নের ৩৯৭.৬৭ বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা নিয়ে গঠিত।এর উত্তরে পতণীতলা,দক্ষিণে মান্দা, দক্ষিণ পূর্বে নওগাঁ সদর, পূর্বে বদলগাছী, পশ্চিমে নিয়ামতপুর ও পোরশা উপজেলা অবসিহত।

 

ঢাকা হতে মহাদেবপুর উপজেলার দূরত্ব সড়ক পথে ৩৩৫ কিঃ মিঃ। মহাদেবপুর উপজেলা সদর হতে রাজশাহী বিভাগীয় শহরের দূরত্ব সড়ক পথে ৮০ কিঃমিঃ। পার্শ্ববর্তী  উপজেলা সদর ও জেলা সদরসমূহের সাথে উন্নত সড়ক যোগাযোগ ব্যবসহা বিদ্যমান।

 

মহাদেবপুর নামকরণ কিভাবে হয়েছিল তা বলা কঠিন। অনুমান করা যায় যে, ১৭৫৭ সালে পলাশীতে নবাব সিরাজ-উদ-দ্দৌলার পরাজয়ের পর এ উপমহাদেশে মুসলমানদের রাষ্টী্রয়,  সামাজিক ও ধর্মীয় অবসহান এবং প্রভাব কমতে থাকে । যার ঢেউ এখানেও এসে পড়ে । অপর দিকে ইংরেজদের কোপানলে পতিত মুসলমানদের রাজত্ব শেষে ইংরেজদের সাবেক সেণহভাজন ও  নব্য গজিয়ে উঠা ধর্মীয় প্রভাবশালী হিন্দু সম্প্রদায় তাদের অবসহান দৃঢ় করে নেয় এবং সমাজের সকল সতরে প্রভাব প্রতিপত্তি ঘটাতে থাকে। ক্ষমতা ও সমাজ পরিবর্তনের এ ত্রুামিতলগ্ণে সর্বক্ষেত্রে হিন্দু প্রভাবের প্রেক্ষাপটে দেব-দেবীর নামানুসারে বিভিন্ন গ্রাম বা সহানের নামকরণ হতে থাকে । এখানে এভাবে লক্ষ্মীপুর, ভীমপুর, রামচন্দ্রপুর, সরস্বতীপুর, দেবীপুর ইত্যাদি গ্রামগুলোর উৎপত্তি হয়। আর এভাবে দেবতা শিব মহাদেবের নাম অনুসারে মহাদেবপুর নামকরণ হয়েছে বলে অনুমিত হয় । এর পূর্বে এ জনপদের  ( গ্রামের) কি নাম ছিল তা জানা যায়নি। এ জনপদ প্রাচীন কালে পুন্ড্রবর্ধনঅঞ্চলভুক্ত ছিল। অন্যদিকে এটা  আবার বরেন্দ্র এর অবিচ্ছেদ্য অংশও বটে ।

 

ইতিহাস থেকে জানা যায় নওগাঁ অঞ্চলের অধিবাসীরা মূলত পুন্ড্রজাতির বংশধারায় বাংলাদেশে সর্ব প্রথম নগর সভ্যতার গোড়াপত্তন করেভছলেন এবং বরেন্দ্রভুমি  পূর্বকালে পুন্ড্রনগর নামে পরিচিত ছিল।মহাদেবপুরে বর্তমানে বসবাসকারীদের অধিকাংশই পশ্চিম বঙ্গের বীরভুম,বর্ধমান ও রাঢ় অঞ্চল থেকে আগত বলে জানা যায়। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বিহার, পশ্চিম বঙ্গের মালদহ,মুর্শিদাবাদ ও বালুরঘাট থেকে প্রচুর লোকজন এ এলাকায় আগমন করতে থাকে। আগত এ সব লোকজন সহানীয় সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার সাথে একাত্ম হয়ে মিশে গেছে। এছাড়াও মহাদেবপুর উপজেলায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক উপজাতি বসবাস করে।

 

মহাদেবপুর বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে অবসিহত একটি সমৃদ্ধ জনপদ। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মহাদেবপুর উপজেলার মুত্তিু সংগ্রামী জনগণের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। পাক হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত আক্রমণে ও সম্মুখ যুদ্ধে এ এলাকার অনেক নিরীহ মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়েছেন। এই উপজেলার খাজুর, নাটশাল, শিবগঞ্জ, বর্তমান জেলা পরিষদ ডাক বাংলোর নিকট আত্রাই নদীর পূর্বপাড়সহ আরো অনেক সহানে পাক হানাদার বাহিনীর সঙেগ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপক যুদ্ধ হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস উপজেলার ছাত্রযুবক কৃষক শ্রমিক জনতা-বীরত্বেরসাথে যুদ্ধ করে বিজয় নিশ্চিত করেছেন।

 

উপজেলার ঐতিহাসিক নির্দশনের মধ্যে প্রাচীন রাজবাড়ী-বর্তমান জাহাঙ্গীরপুর সরকারী কলেজ সংলগ্ণ পরিত্যত্তু ভবন আদ্যাবাড়ী মন্দির(খাজুর ইউপি), আলতা দীঘি জলমহাল(চেরাগপুর), শিবগঞ্জ কাচারীবাড়ী(উত্তরগ্রাম সফাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিস), চেরাগপুর ইউনিয়নের আলীপুর গ্রামের একশত আট কক্ষ বিশিষ্ট মাটির দ্বিতল বাড়ী, মহাদেবপুর অটো রাইস মিল, আত্রাই নদী, জেলা পরিষদ অডিটোরিয়াম, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মহাদেবপুরের সমৃদ্ধ ইতিহাসের অংশ।

 

মহাদেবপুর উপজেলার বরেন্দ্র অঞ্চল পলল ও নিমণ অঞ্চল বেসিন। প্রকৃতি অঞ্চলে অমতর্গত সমতল ভূমি দ্বারা গঠিত। উপজেলার এক পাশ দিয়ে প্রবাহিত অাত্রাই নদী। কিছু খাড়ি ও বিল রয়েছে যা বর্ষার সময় বৃষ্টির পানি প্রবাহিত হয়। এক সময় এ অঞ্চলে অনেক জমিদারের বসবাস ছিল। তয়বদের চিহু এখনো একেবারে বিলুপ্ত হয়ে যায় নি। এলাকায় প্রচুর সংখ্যক গাছপালা রয়েছে। উপজেলায় মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের সংখ্যা বেশী। উপজেলায় অনেক হিন্দু ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন। উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকেরা বাস করে। বৃহদাকারের বন্যার সময় উপজেলার নিমণ অঞ্চল বন্যা কবলিত হয়।

 

উপজেলায় মোট ইউনিয়নের সংখ্যা ১০টি।

ইউনিয়নসমূহের নামঃ

১। মহাদেবপুর, ২। খাজুর, ৩। এনায়েতপুর, ৪। রাইগাঁ, ৫। হাতুড়, ৬। চেরাগপুর, ৭। চাঁন্দাশ, ৮। সফাপুর,        ৯। উত্তরগ্রাম, ১০। ভীমপুর।

মোট মৌজার সংখ্যাঃ ৩০৭টি

মোট  গ্রামের সংখ্যাঃ ২৯৮টি

 

উপজেলার সকল ইউনিয়নেই কিছু কিছু পাকা সড়ক রয়েছে। উপজেলা সদর থেকে সকল ইউনিয়ন পরিষদে সরাসরি পাকা রাসতার সংযোগ রযেছে। ফলে পথেই বাস, ভ্যান, রিক্সা, টেম্পু, বাস চলাচল করে এবং মালপত্র পরিবহনের জন্য ট্রাক ও ট্রাকটর, লরি ইত্যাদি চলাচল করে।

 

উপজেলাটির সমগ্র এলাকা বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। তবে নিমণভূমি অঞ্চল যেমন- চেরাগপুরের অালতা দীঘিসহ অন্যান্য ছোট বিল অঞ্চলে বর্ষার সময় পানির প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরী হয়। উপজেলার অধিকাংশ জমি বরেন্দ্র অঞ্চলভুক্ত হলেও ধান,পাট ও গমের পাশাপাশি ভূট্রা, অাখসহ শাকসবজি উৎপাদনের উপযোগী। উপজেলার ভুমি রদপের মধ্যে উচ্চ ভূমি,মাঝারি উচ্চ, নিমণ ভূমি, অতি নিমণভুমিও রয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষের প্রতি কৃষকদের অাগ্রহ বেশি। ভূমিরদপ দোঁয়াশ, বেলে দোঁয়াশ এবং এঁটেল মাটির মিশ্রণ।

 

মহাদেবপুর উপজেলা মৌসুমী বায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। ডিসেম্বর ও জানুয়ারী মাসের গড় তাপমাত্রা থাকে ৭-১১  ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং এপ্রিল,মে মাসে তাপমাত্রা থাকে সর্ব্বোচ্চ । এসময় গড় তাপমাত্রা থাকে ৪২ ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও উপরে। এ অঞ্চলে মার্চ মাসের শুরত থেকেই গ্রীষ্মকাল শুরত হয়।